সাময়িক প্রসঙ্গ
কা‘বা নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, তার উদ্দেশ্য ও মাহাত্ম্য
আবূ সা‘আদ আব্দুল মোমেন বিন আব্দুস্ সামাদ

আল্লাহ তা‘আলার বাণী

اِنَّ اَوَّلَ بَیۡتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِیۡ بِبَکَّۃَ مُبٰرَکًا وَّهُدًی لِّلۡعٰلَمِیۡنَ ۚ۝ فِیۡهِ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ مَّقَامُ اِبۡرٰهِیۡمَ ۬ۚ وَمَنۡ دَخَلَه کَانَ اٰمِنًا  وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا ؕ وَمَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الۡعٰلَمِیۡنَ

শাব্দিক অনুবাদ

اِنَّ অর্থ- নিশ্চয়, اَوَّلَ সর্বপ্রথম, بَیۡتٍ ঘর, وُّضِعَ যাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, لِلنَّاسِ মানুষের জন্য, لَلَّذِیۡ তা بِبَکَّۃَ বাক্কাতে (‘বাক্কা’ এটি মক্কার আরো একটি নাম), مُبٰرَکًا বরকতময়, وَّ এবং, هُدًی পথ প্রদর্শক,لِّلۡعٰلَمِیۡنَ  বিশ্ববাসীর জন্য, فِیۡهِ তার মাঝে রয়েছে,اٰیٰتٌۢ  নিদর্শন, بَیِّنٰتٌ সুস্পষ্ট, مَّقَامُ اِبۡرٰهِیۡمَ মাকামে ইব্রাহীম (ইব্রাহীম [আ.]-এর পায়ের ছাপ রয়েছে যে পথরে), وَ এবং, مَنۡ যে, دَخَلَه তাতে প্রবেশ করবে, کَانَ اٰمِنًا সে নিরাপত্তা লাভ করবে, وَ এবং, لِلّٰهِ আল্লাহর জন্য, عَلَی النَّاسِ মানুষের উপর, حِجُّ হজ্জ (এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘ইবাদত যা ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি), الۡبَیۡتِ ঐ ঘরের, مَنِ اسۡتَطَاعَ যে সামর্থ্য রাখে, اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا সেই পথের (ব্যয়ভার বহনে), وَ এবং, مَنۡ  যে, کَفَرَ অস্বীকার করে, فَاِنَّ অতঃপর নিশ্চয়, اللّٰهَ আল্লাহ,  غَنِیٌّধনবান, عَنِ হতে/থেকে, الۡعٰلَمِیۡنَ বিশ্বজাহান। 

সরল বঙ্গানুবাদ

“নিশ্চয় মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা বক্কায় (মক্কায়) অবস্থিত। তা বরকতময় ও বিশ্ববাসীদের জন্য পথ প্রদর্শক। তাতে রয়েছে সুস্পষ্ট নিদর্শন, মাক্বামে ইব্রাহীম। আর যে এতে প্রবেশ করবে সে নিরাপত্তা লাভ করবে। আর মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহে হজ্জ করা তার উপর অবশ্য কর্তব্য। আর যে অস্বীকার করবে সে জেনে রাখুক যে, আল্লাহ সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন।” [১]

বিষয়বস্তু ও অবতরণের প্রেক্ষাপট

আলোচ্য আয়াতদ্বয়ে কা‘বা ঘরের নির্মাণ ও তার শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা করা হয়েছে হজ্জের বিধান সম্পর্কে। রাসূল (সা.) যখন ক্বিবলা পরিবর্তন করলেন তখন ইয়াহুদীদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত অভিযোগ (বায়তুল মাকদিস তো প্রথম ‘ইবাদতখানা, মুহাম্মদ (সা.) ও তার সাথীরা কেন তবে নিজেদের কিবলা পরিবর্তণ করে নিলো) খন্ডনে ও কা‘বা গৃহের বৈশিষ্ট্য বর্ণনাসহ মানুষকে হজ্জের বিধান দেওয়ার জন্য এ আয়াতদ্বয় অবতীর্ণ হয়।

আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসীর

اِنَّ اَوَّلَ بَیۡتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ

অর্থাৎ- “নিশ্চয় মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম এ গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।” এটিই সারা বিশ্বে সর্বপ্রথম ‘ইবাদতের জন্য নির্মিত স্থান। বিশ্বের সর্বপ্রথম ‘ইবাদতঘর। ইতিপূর্বে কোনো উপাসনালয়ও ছিল না এবং বাস গৃহও ছিল না। এ কারণে ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার, মুজাহিদ, ক্বাতাদাহ্, সুদ্দী প্রমুখ সাহাবী ও তাবেয়ীগণের মতে কা‘বাই বিশ্বের সর্বপ্রথম গৃহ। আলোচ্য আয়াতাংশে وُّضِعَ لِلنَّاسِ বলে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সমগ্র মানব জাতির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই কা‘বা গৃহের প্রতি সকল মানুষের সম্মান প্রদর্শন অব্যাহত রয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা এর প্রকৃতিতে এমন মাহাত্ম্য নিহিত রেখেছেন যে, মানুষের অন্তর আপনা-আপনিই এর দিকে আকৃষ্ট হয়।

لَلَّذِیۡ بِبَکَّۃَ مُبٰرَکًا وَّهُدًی لِّلۡعٰلَمِیۡن

অর্থাৎ- “ঐ গৃহ যা বাক্কায় (মক্কায়) অবস্থিত। ‘বাক্কা’ শব্দের অর্থ মক্কা। এখানে ‘মীম’ অক্ষরকে ‘বা’ অক্ষর দ্বারা পরিবর্তন করা হয়েছে। আরবী ভাষায় এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে। অথবা উচ্চারণ ভেদে এর অপর নাম বাক্কা। বড় বড় স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তির স্কন্ধ এখানে ভেঙ্গে যেত এবং প্রত্যেক সম্মানিত ব্যক্তির মস্তক এখানে শুয়ে পড়ত বলে একে মক্কা বলা হয়। একে মক্কা বলার আরো একটি কারণ এই যে, এখানে জনগণের ভীর জমেই থাকে। এর আরো একটি কারণ এই যে, এখানে মানুষ মিশ্রিত হয়ে পড়ে। এমনকি কখনো কখনো স্ত্রী লোকেরা সম্মুখে সালাত আদায় করতে থাকে এবং পুরুষ লোকেরা তাদের পিছনে হয়ে যায় যা অন্য কোনো জায়গায় হয় না। ইবনু ‘আব্বাস (রা.) বলেন : ফাজ্জ হতে তানঈম পর্যন্ত হচ্ছে মক্কা এবং বায়তুল্লাহ্ হতে বাতহা পর্যন্ত হচ্ছে বাক্কা। বায়তুল্লাহ্ এবং একে ঘিরে থাক মাসজিদকে বাক্কা বলা হয়েছে। আর অবশিষ্ট শহরকে মক্কা বলা হয়। রাসূল (সা.) মক্কার হারূরা বাজারে দাঁড়িয়ে বললেন : হে মক্কা! তুমি আল্লাহ তা‘আলার নিকট সমগ্র ভূমির মধ্যে উত্তম ও প্রিয় ভূমি। যদি আমাকে তোমার হতে জোরপূর্বক বের করে দেয়া না হতো তবে আমি কখনও তোমাকে ছেড়ে যেতাম না। এ মক্কাতেই রয়েছে মহান আল্লাহর ঘর কা‘বা। যা বরকতময় ও কল্যাণের আধার এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথ প্রদর্শক।

فِیۡهِ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ مَّقَامُ اِبۡرٰهِیۡمَ

অর্থাৎ- “এর মধ্যে প্রকাশ্য নিদর্শনাবলী রয়েছে। এই নিদর্শনাবলীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মাকাম-ই-ইব্রাহীম।” যা একটি বড় নিদর্শন হওয়ার কারণেই কুরআনে একে স্বতন্ত্রভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি একটি পাথরের নাম। এটি এমন একটি পাথর যেখানে দাঁড়িয়ে ইব্রাহীম (আ.) তার পুত্র ইসমা‘ঈল (আ.)-এর নিকট হতে পাথর নিয়ে নিয়ে কা‘বার দেয়াল উচু করতেন। এ পাথরের গায়ে ইব্রাহীম (আ.)-এর গভীর পদচিহ্ন অদ্যাবধি বিদ্যমান। একটি পাথরের উপর পদচিহ্ন পড়ে যাওয়া মহান আল্লাহর অপার কুদরতের নিদর্শন। এই পাথরটি প্রথমে বায়তুল্লাহ’র নীচে দরজার নিকটে অবস্থিত ছিল। কিন্তু ‘উমার (রা.) স্বীয় খিলাফতের ‘আমলে এটাকে সামান্য সরিয়ে পূর্বমুখী করে দিয়েছিলেন যেন তাওয়াফকারীগণ পূর্ণভাবে তাওয়াফ করতে পারে এবং তাওয়াফের পরে যারা মাকাম-ই-ইব্রাহীমের পেছনে নামায পড়তে চান, তাদের যেন কোনো অসুবিধা সৃষ্টি না হয়। কেননা কুরআনুল কারীমে মাকাম-ই-ইব্রাহীমকে নামাযের মুসাল্লা বানানোর নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনÑ

وَاتَّخِذُوۡا مِنۡ مَّقَامِ اِبۡرٰهمَ مُصَلًّی

অর্থাৎ- “আর তোমরা মাকাম-ই-ইব্রাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ করো।” [২]

ইবনু ‘আব্বাস (রা.) বলেন যে, প্রকাশ্য নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি নিদর্শন হচ্ছে এই মাকাম-ই-ইব্রাহীম। আর মুজাহিদ বলেন, মাকাম-ই-ইবরাহীমের উপর ইব্রাহীম (আ.)-এর যে পদচিহ্ন রয়েছে ওটাও একটি নিদর্শন। হাতীম, সম্পূর্ণ হারাম শরীফ ও হজ্জের সমুদয় রুকনকেও মুফাস্সিরগণ মাকাম-ই-ইব্রাহীমের তাফসীরের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

وَمَنۡ دَخَلَه کَانَ اٰمِنًا

অর্থাৎ- “এবং যে এতে প্রবেশ করবে সে নিরাপত্তা লাভ করবে।” এ নিরাপত্তা মূলতঃ সৃষ্টিগতভাবে। অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টিগতভাবেই প্রত্যেক জাতি ও সম্প্রদায়ের অন্তরে কা‘বা গৃহের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ নিহিত রেখেছেন। জাহেলিয়াত যুগের আরব ও তাদের বিভিন্ন গোত্র অসংখ্য পাপাচারে লিপ্ত থাকা সত্বেও কা‘বা গৃহের সম্মান রক্ষার জন্যে প্রাণ উৎসর্গ করতেও কুন্ঠিত ছিল না। হারামের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে তারা পিতার হত্যাকারীকে দেখেও কিছুই বলত না। কেননা এখানে যুদ্ধ, খুনাখুনি এবং শিকার করা এমনকি গাছ কাটাও নিষিদ্ধ। [৩]

মক্কা বিজয়ের সময়ে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হারামের অভ্যন্তরে কিছু সময়ের জন্য রাসূল (সা)-কে যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল কা‘বা গৃহকে পবিত্র করা। বিজয়ের পর রাসূল (সা.) ঘোষণা করেন যে, এ অনুমতি কা‘বা গৃহকে পবিত্রকরণের উদ্দেশ্যে কয়েক ঘন্টার জন্যই ছিল। এরপর পূর্বের ন্যয় চিরকালের জন্য কা‘বার হারামে যুদ্ধ বিগ্রহ নিষিদ্ধ। তিনি আরো বলেন : আমার পূর্বে কারো জন্যে হারামের অভ্যন্তরে যুদ্ধ করা হালাল ছিল না, আমার পরেও কারো জন্যে হালাল নয়। আমাকেও মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্যে অনুমতি দেয়া হয়েছিল, পরে আবার হারাম করে দেয়া হয়েছে। [৪]

ক্বাতাদাহ্ বলেন, হাসান বাসরী বলেছেন, হারাম শরীফ কাউকে মহান আল্লাহর সুনির্দিষ্ট হদ বা শাস্তি বাস্তবায়নে বাধা দেয় না। যদি কেউ হারামের বাইরে অন্যায় করে হারামে প্রবেশ করে তবে তার উপর হদ বা শাস্তি কায়েম করতে কোনো বাধা নেই। যদি কেউ হারামে চুরি করে কিংবা ব্যভিচার করে বা হত্যা করে তার উপর শরীয়তের আইন অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। [৫]

وَلِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا

অর্থাৎ- “আর মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহে হজ্জ করা তার উপর অবশ্য কর্তব্য।” ‘যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে’-এর অর্থ হলো- সম্পূর্ণ রাহা-খরচ পূরণ হওয়ার মতো যথেষ্ট পাথেয় যার কাছে আছে। সাংসারিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত এ পরিমাণ অর্থ থাকতে হবে, যা দ্বারা সে কা‘বা গৃহ পর্যন্ত যাতায়াত ও সেখানে অবস্থানের ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম হয়। এছাড়া গৃহে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণেরও ব্যবস্থা থাকতে হবে। দৈহিক দিক দিয়ে হাত পা ও চক্ষু কর্মক্ষম হতে হবে। কারণ যাদের এসব অঙ্গ বিকল, তাদের পক্ষে স্বীয় বাড়ি-ঘরেই চলাফেরা দুস্কর। এ অবস্থায় হজ্জের অনুষ্ঠানাদি পালন করা তার পক্ষে কীরূপে সম্ভব হবে? তাই রাস্তার ও জান-মালের নিরাত্তা এবং শারীরিক সুস্থতা ইত্যাদিও সামর্থে্যর অন্তভুর্ক্ত। মহিলাদের জন্য মাহরাম (স্বামী অথবা যার সাথে তার বিবাহ চিরতরে হারাম এমন কোনো লোক) থাকা। [৬]  এই আয়াতে প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ্জ ফর্য হওয়ার দলিল রয়েছে। হাদীস দ্বারা এ কথাও পরিষ্কারভাবে সাব্যস্ত হয়েছে যে, হজ্জ জীবনে একবারই ফরয। [৭] হজ্জ শব্দের অর্থ হচ্ছে ইচ্ছে করা। শরীয়তের পরিভাষায় কা‘বা গৃহ প্রদক্ষিণ, আরাফাত ও মুযদালিফায় অবস্থান ইত্যাদি ক্রিয়াকর্মকে হজ্জ বলা হয়। হজ্জের বিস্তারিত নিয়ম-পদ্ধতি রাসূলুল্লাহ (সা.) মৌখিক উক্তি ও কর্মের মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন।

وَمَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الۡعٰلَمِیۡنَ

অর্থাৎ- “আর যে অস্বীকার করবে সে জেনে রাখুক যে, আল্লাহ সৃষ্টিজগতের প্রতি অমুখাপেক্ষী।” কুরআনুল কারীমের আলোচ্য আয়াতাংশে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করাকে ‘কুফ্রী’ বলে আখ্যায়িত করেছে। এ থেকে হজ্জ ফর্য হওয়ার এবং তা যে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সে বিষয়ে আর কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকে না। বহু হাদীসে ও সাহাবীদের উক্তিতে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে হজ্জ করে না, তার ব্যাপারে কঠোর ধমক এসেছে। [৮] ইবনু ‘আব্বাস (রা.) বলেন, আয়াতে ‘কুফ্র’ বলতে বুঝানো হয়েছে এমন ব্যক্তির কাজকে, যে হজ্জ করাকে নেককাজ হিসেবে নিলো না আর হজ্জ ত্যাগ করাকে গুনাহের কাজ মনে করল না। [৯] মুজাহিদ বলেন, কুফ্রী করার অর্থ, আল্লাহ ও আখিরাতকে অস্বীকার করা। [১০] মোটকথা বান্দা বড়-ছোট যে ধরনের কুফ্রই করুক না কেন তার জানা উচিৎ যে, আল্লাহ তা‘আলা তার মুখাপেক্ষী নন। এ আয়াতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা তার সৃষ্টির কোনো কিছুর মুখাপেক্ষী নন। যদি সমস্ত লোকই কাফির হয়ে যায় তবুও এতে তার রাজত্বে সামান্য হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটবে না। পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন স্থানে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যেমন-

اِنۡ تَکۡفُرُوۡۤا اَنۡتُمۡ وَمَنۡ فِی الۡاَرۡضِ جَمِیۡعًا ۙ فَاِنَّ اللّٰهَ لَغَنِیٌّ حَمِیۡدٌ

“তোমরা এবং পৃথিবীর সবাই যদি অকৃতজ্ঞ হও তারপরও আল্লাহ অভাবমুক্ত ও প্রশংসার যোগ্য।” [১১]

তিনি আরো বলেন :

فَکَفَرُوۡا وَتَوَلَّوۡا وَّاسۡتَغۡنَی اللّٰهُ وَاللّٰهُ غَنِیٌّ حَمِیۡدٌ

“অতঃপর তারা কুফ্রী করল ও মুখ ফিরিয়ে নিলো। আল্লাহও (তাদের ঈমানের ব্যাপারে) ভ্রম্নক্ষেপহীন হলেন; আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত।” [১২]

সুতরাং আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা তার বান্দাদেরকে আনুগত্য করা এবং অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ বান্দাদের উপকারার্থেই দিয়ে থাকেন। এ জন্যে দেন না যে, বান্দার আনুগত্য বা অবাধ্যতা মহান আল্লাহর কোনো ক্ষতি বা উপকার করবে। [১৩]

কা‘বা ঘরের নামকরাণ ও এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়

এই ঘরটির বেশ কয়েকটি নাম রায়েছে। প্রথমতঃ কা‘বা, যার অর্থ ‘সম্মুখ’ বা ‘সামনে’। যেহেতু এই ঘরটিকে সামনে রেখে পৃথিবীর সকল মানুষ মহান আল্লাহকে সিজদাহ করে, সালাত আদায় করে ও তাওয়াফ করে তাই তাকে কা‘বা বলা হয়। কারো কারো মতে কা‘বা অর্থ- উচু ঘর। আরবীতে উচু ঘরকে কা‘বা বলা হয়। এই ঘরটি যেহেতু উচুস্থানে অবস্থিত তাই তাকে কা‘বা বলা হয়। এর আরো একটি নাম হলো- বায়তুল্লাহ, এর অর্থ- আল্লাহর ঘর। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা এটিকে নিজের ঘর (بَيْتِيَ অর্থাৎ- আমার ঘর) বলে সূরা আল হজ্জের ২৬ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন। তাই তাকে বায়তুল্লাহ বা মহান আল্লাহর ঘর বলা হয়। এ ঘরের আরো একটি নাম সূরা আল মায়িদার ৯৭  নং আয়াতে এসেছে, আর তা হলো- বায়তুল হারাম। এখানে যেকোনো প্রকার গুনাহ এবং যাবতীয় নাজায়িয কাজ হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি ঝগড়া-বিবাদ ও যুদ্ধও এখানে নিষিদ্ধ। তাছাড়া এটি হারাম সীমানায় অবস্থিত বলেও তাকে বায়তুল হারাম বলা হয়। (হারাম সীমানা হলো- পশ্চিম দিকে জেদ্দার পথে ‘আশ-শুমাইসি’ নামক স্থান পর্যন্ত। যাকে আল-হুদায়বিয়া বলা হয়। এটি মক্কা থেকে ২২ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত। পূর্বে ‘ওয়াদিয়ে উয়ায়নাহ্’ নামক স্থানের পশ্চিম কিনারা পর্যন্ত, যা মক্কা থেকে ১৫ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত। উত্তরে ‘তানঈম’ নামক স্থান পর্যন্ত। এটি মক্কা থেকে ৭ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত। বর্তমানে এখানে একটি মসজিদ আছে, যা ‘আয়িশাহ্ মসজিদ নামে পরিচিত। উত্তর-পূর্ব দিকে ‘জি-ইরানাহ’ এর পথে শারায়ে মুজাহেদিনের গ্রাম পর্যন্ত, যা মক্কা থেকে ১৬ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত। দক্ষিণে ‘তিহামা’ হয়ে ইয়ামেন যাওয়ার পথে ‘ইজাআত লিবন’ নামক স্থান পর্যন্ত, যা মক্কা থেকে ১২ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত।) সূরা আল হজ্জের ২৯ ও ৩৩ নং আয়াতে এটিকে الْبَيْتِ الْعَتِيقِ অর্থাৎ- প্রাচীনতম ঘর বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

নয়নাভিরাম ও অপরূপ রূপের সৌন্দর্যে সৌন্দর্যমণ্ডিত কা‘বাঘর দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষকে আকৃষ্ট করে রেখেছে। প্রতি প্রহরে কোনো গৃহ বা স্থাপনাকে কেন্দ্র করে কোটি মানুষের আবর্তনের ঘটনা দুনিয়ায় আর একটিও নেই। এটিই আমাদের প্রানাধিক প্রিয় কিবলা। রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রথম দিকে ‘বায়তুল মাকদাস’-এর দিকে মুখ করে সলাত আদায় করলেও তার হৃদয়ের ঐকান্তিক বাসনা ছিল কা‘বাকে কিবলা বানানোর। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা তার সে মনের বাসনা পূর্ণ করে দিলেন। তিনি কা‘বাকে কিবলা বানিয়ে দিলেন।

কা‘বা নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

আল্লামা ইদ্রিস কান্ধলবী (সা.) স্বীয় কিতাব তাফসীরে মারেফুল কুরআনে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন যে, নভমণ্ডল, ভূমণ্ডল, চন্দ্র, সূর্য ও তারকারাজি সৃষ্টি করার আগে মহান রাব্বুল ‘আলামিন কা‘বার জমিন সৃষ্টি করেছেন। তাফসীরবিদ মুজাহিদ বলেন, আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বাইতুল্লাহর স্থানকে সমগ্র ভূপৃষ্ঠ থেকে দু‘হাজার বছর আগে সৃষ্টি করেন। তারপর কা‘বার নিচ থেকে জমিনকে বিস্তৃত করে সারা পৃথিবী সৃষ্টি করেন।

ইমাম বায়হাক্বীর বর্ণনায় এসেছে- রাসূল (সা.) বলেছেন, আদম এবং হাওয়া (আলাইহিমাস্ সালাম) দুনিয়ায় আগমনের পর আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে তাদেরকে কা‘বাঘর নির্মাণের আদেশ দেন। ঘর নির্মিত হয়ে গেলে তাদেরকে এই ঘর তাওয়াফ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সময় আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা আদম (আ.)-কে বলেন : হে আদম আপনি দুনিয়ার প্রথম মানুষ এবং এ গৃহ মানবজাতির জন্য প্রথম ঘর। [১৪]

কা‘বাঘরের এ স্থাপনা নবী নূহ্ (আ.)-এর যুগ পর্যন্ত অক্ষুন্ন ছিল। নূহ্ (আ.)-এর সময়ে সংঘটিত মহাপ্লাবনে এ স্থাপনা বিধ্বস্ত হয়। পরে ইব্রাহীম (আ.) প্রাচীন ভিত্তির ওপরই এ ঘর পুনঃনির্মাণ করেন। যেমন- উল্লেখ আছে-

وَاِذۡ بَوَّاۡنَا لِاِبۡرٰهِیۡمَ مَکَانَ الۡبَیۡتِ

অর্থাৎ- “আর স্মরণ করো, যখন আমি ইব্রাহীমের জন্য কা‘বাঘরের স্থান ঠিক করে দিলাম।” [১৫]

কোনো কোনো তাফসীরে এসেছে- ইব্রাহীম (আ.)-কে কা‘বাঘর নির্মাণের আদেশ দেওয়ার পর ফেরেশ্তাদের মাধ্যমে বালুর স্তূপের নিচে পড়ে থাকা কা‘বা ঘরের পূর্বের ভিতকে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে এক দুর্ঘটনায় প্রাচীর ধসে গেলে কা‘বার পাশে বসবাসকারী জুরহাম গোত্রের লোকেরা একে পুনঃনির্মাণ করেন। পরে একবার আমালেকা সম্প্রদায়ও এঘর পুননির্মাণ করেন। তারপর কুরাইশগণ এ ঘর পুননির্মাণ করেন। এ নির্মাণে মহানবী (আ.)-ও শরিক ছিলেন এবং তিনিই হাজরে-আসওয়াদ স্থাপন করেছিলেন। ইসলাম-পূর্ব যুগে কুরাইশদের এ নির্মাণ কাজে ইব্রাহীম (আ.)-এর মূল ভিত্তি সামান্য পরিবর্তিত হয়ে যায়। প্রথমতঃ এর একটি অংশ (হাতিম) কা‘বা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়তঃ ইব্রাহীম (আ.)-এর নির্মাণে কা‘বা ঘরের দরজা ছিল দু’টি, একটি প্রবেশের জন্য এবং অন্যটি পশ্চাৎমুখী হয়ে বের হওয়ার জন্য। কিন্তু কুরাইশরা শুধু পূর্ব দিকে একটি দরজা রাখে। তৃতীয়তঃ তারা সমতল ভূমি থেকে অনেক উচুতে দরজা নির্মাণ করে যাতে সবাই সহজে ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে; বরং তারা যাকে অনুমতি দেয়, সে-ই যেন প্রবেশ করতে পারে।

রাসূল (আ.) একবার ‘আয়িশাহ্ (রা.)-কে বলেন, আমার ইচ্ছে হয়, কা‘বাঘরের বর্তমান নির্মাণ ভেঙে দিয়ে ইব্রাহীম (আ.)-এর নির্মাণের অনুরূপ করে দেই। কিন্তু কা‘বাঘর ভেঙে দিলে নতুন মুসলিমদের মনে ভুল-বোঝাবুঝি দেখা দেওয়ার কথা চিন্তা করেই বর্তমান অবস্থা বহাল রাখছি।

তারপর খোলাফায়ে রাশেদিনের পর ৬৪ হিজরির দিকে মক্কার ওপর ‘আয়িশাহ্ (রা.)’র ভাগ্নে ‘আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রা.)-এর কর্তৃত্ব যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন তিনি মহানবী (সা.)-এর উপরোক্ত ইচ্ছে কার্যে পরিণত করেন এবং কা‘বাঘরের নির্মাণ ইব্রাহীম (আ.)-এর নির্মাণের অনুরূপ করে দেন। [১৬]

কিন্তু হাজ্জাজ ইবনু ইউসূফ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার পর ইসলাম-পূর্ব জাহেলিয়াত আমলের কুরাইশরা যেভাবে নির্মাণ করেছিল, সেভাবেই পুনঃর্নির্মাণ করেন। হাজ্জাজ ইবনু ইউসূফের পর কোনো কোনো বাদশাহ উল্লেখিত হাদীস অনুযায়ী কা‘বাঘরকে ভেঙে আবার নির্মাণ করার ইচ্ছা করেছিলেন। কিন্তু তৎকালীন সময়ে শ্রেষ্ট ইমাম মালেক ইবনু আনাস (রা.) ফাতাওয়া দেন যে, ‘এভাবে কা‘বাঘরের ভাঙাগড়া অব্যাহত থাকলে পরবর্তী বাদশাহদের জন্য একটি খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়ে যাবে এবং কা‘বাঘর তাদের হাতে একটি খেলনায় পরিণত হবে। কাজেই বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে একে সে অবস্থায়ই থাকতে দেয়া উচিত। গোটা মুসলিম সমাজ তার এ ফাতাওয়া গ্রহণ করে নেয়। তবে মেরামতের প্রয়োজনে ছোটখাটো কাজ সব সময়েই অব্যাহত থাকে। [১৭]

কা‘বা নির্মাণের উদ্দেশ্য ও মাহাত্ম্য

আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা বলেন :

وَعَهِدۡنَاۤ اِلٰۤی اِبۡرٰهمَ وَاِسۡمٰعِیۡلَ اَنۡ طَهِّرَا بَیۡتِیَ لِلطَّآئِفِیۡنَ وَالۡعٰکِفِیۡنَ وَالرُّکَّعِ السُّجُوۡدِ

“আমি ইব্রাহীম ও ইসমা‘ঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকূ‘-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো।” [১৮]

আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলার এ বাণী থেকে বুঝা যায় কা‘বা হলো- তাওয়াফ, ইতেকাফ ও সলাতের প্রাণকেন্দ্র। তাই পৃথিবীর সকল মসজিদের সম্মুখপানে থাকে এই কা‘বা। এই কা‘বা হলো- বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মেলনকেন্দ্র। এর রয়েছে অসাধারণ সম্মোহনি শক্তি। এর ভিত্তি হয়েছিল ইখলাস ও একনিষ্ঠতার উপকরণ দিয়ে শির্কমুক্ত একাত্ববাদের উপর। এই ঘরের মর্যাদা এত বেশি যে, অপবিত্র অবস্থায় এই ঘরে প্রবেশের সুযোগ নেই। সমগ্র বিশ্বের মুসলিমদের অন্তরে আল্লাহ তা‘আলা কা‘বা ঘরের মর্যাদাকে এমনভাবে স্থাপন করে দিয়েছেন যে, এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য মানুষ যাবতীয় ভাবাবেগ ও প্রবৃত্তিকে বর্জন করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। যে একবার দেখে তার মনে এই ঘরকে পুনরায় দেখার আগ্রহ তৈরি হয়। মুজাহিদ (রা.) বলেন, কোনো মানুষই কা‘বাঘর তাওয়াফ করে তৃপ্ত হয় না; বরং প্রতিবার তাওয়াফের পর পুনরায় তাওয়াফের বাসনা নিয়ে ফিরে আসে। সুনানে বায়হাক্বীর একটি বর্ণনায় আছে- ইবনু ‘আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কা‘বাঘরের উপর প্রতিদিন ১২০টি রহমত বর্ষিত হয়। তাওয়াফকারীদের জন্য ৬০টি। সলাত আদায়কারীদের জন্য ৪০টি এবং কা‘বার প্রতি দৃষ্টিদানকারীদের প্রতি বাকি ২০টি।


শিক্ষাসমূহ

১.ভূ-পৃষ্ঠে নির্মিত প্রথম ‘ইবাদতগাহ কা‘বা।

২.কা‘বা হলো- বিশ্বমুসলিমের মিলনকেন্দ্র।

৩.কা‘বার কারণেই মক্কা ও তার আশপাশের এলাকা শান্তি ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত। বরকতময় ও কল্যাণের আধার।

৪.সামর্থ্যবানদের জন্য হজ্জ হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘ইবাদত। আর বায়তুল্লাহ তাওয়াফ হলো ‘উমরাহ্ ও হজ্জের প্রাণ।

৫.যে কা‘বার চত্তরে প্রবেশ করবে সে ক্ষুদা ও সঙ্কা মুক্ত থাকবে।

৬. এখানে রয়েছে- হাজরে আসওয়াদ, মাক্বামে ইবরাহী, জমজম কূপ ও সাফা-মরাওয়ার মতো মহানশ্রষ্টার বেশ কয়েকটি সুস্পষ্ট নিদর্শন।


* প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, জা’মেআ দারুল ক্বোরআন, ঢাকা, বাংলাদেশ।

[১] সূরা আ-লি ‘ইমরান : ৯৬-৯৭।

[২] সূরা আল বাক্বারাহ্ : ১২৫।

[৩] সহীহুল বুখারী; সহীহ মুসলিম।

[৪] বুখারী- হাদীস নং- ১৩৪৯; সহীহ মুসলিম- হা. ১৩৫৫।

[৫] তাফসীরে তাবারী।

[৬] তাফসীরে ফাতহুল ক্বাদীর।

[৭] তাফসীরে ইবনু কাসীর।

[৮] তাফসীর ইবনু কাসীর।

[৯] তাফসীরে তাবারী।

[১০] তাফসীরে তাবারী।

[১১] সূরা ইব্রা-হীম : ৮।

[১২] সূরা আত্ তাগা-বুন : ৬।

[১৩] আদ্ওয়াউল বায়ান।

[১৪] তাফসীর ইবনু কাসীর।

[১৫] সূরা আল হাজ্জ : ২৬।

[১৬] তাফসীরে নূরুল কুরআন- আল-বালাগ পাবলিকেশন্স, ঢাকা, পঞ্চম মুদ্রণ, ২০১২, পৃষ্ঠা নং-৪৪৫।

[১৭] তাফসীরে নূরুল কুরআন- আল-বালাগ পাবলিকেশন্স, ঢাকা, পঞ্চম মুদ্রণ, ২০১২, পৃ. ৪৪৪।

[১৮] সূরা আল বাক্বারাহ্ : ১২৫।


আপনার মন্তব্য


ঢাকায় সূর্যোদয় : 5:14:43 সূর্যাস্ত : 6:36:03

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত